জন্ম যুক্তরাজ্যে। বেড়ে উঠাও সেখানে। কিন্তু পশ্চিমা আবহ ছাপিয়ে সিলেটি সন্তান আব্দুল মতিনের অন্তকরণে ঢেউ উঠালো রক্তের টান, নাড়ির টান, মা ও মাটির টান। যে কারণে বার বার বাঙালি ও বাংলাদেশের জন্য প্রাণ দেওয়া বীর শহিদদের বিভিন্ন দিবসে পুষ্পশ্রদ্ধা জানাতে ব্রিটেনের অঙ্গরাজ্য স্কটল্যান্ডের অ্যাভারডিন শহরে একটি শহিদ মিনার স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
স্কটল্যান্ডের অ্যাভারডিন শহরে বসবাসরত আব্দুল মতিন গত ২৮ সেপ্টেম্বর অ্যাভারডিন সিটি কাউন্সিলের মেয়র বরাবরে এবং ওই সিটি কর্তৃপক্ষের প্ল্যানিং বিভাগে লিখিতভাবে এ আবেদন জানান।
আবেদনি তিনি উল্লেখ করেন- ‘বাংলাদেশের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম অধ্যায় হলো একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। এই মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জন্মলাভ করে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। তবে মহান মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি তৈরি হয় আরও আগে থেকে। ১৯৫২ সালে নিজস্ব ভাষার অধিকার রক্ষার জন্য জীবন দান করতে হয় তৎক্ষালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশের) ছাত্র জনতার। ১৯৫৮ সালে জেনারেল আইয়ুব খান সামরিক শাসন জারি করে ক্ষমতা দখল করে। ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির স্বায়ত্বশাসন প্রতিষ্ঠা করার লক্ষে ছয় দফা দাবি পেশ করেন। ছয় দফা ম্যান্ডেট নিয়ে পাকিস্তানে ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর সর্বপ্রথম অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ। পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে তার উত্তরণ ঘটে। জনগণ প্রত্যাশা করেছিলেন- নির্বাচিত রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে পূর্ব পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের বঞ্চনার ইতিহাসের গতি পাল্টাবেন।
পাকিস্তানের শাসকবর্গ ও কিছু রাজনৈতিক নেতা এবং কিছু সামরিক কর্মকর্তা ষড়যন্ত্রের গ্রন্থিগুলো এমনভাবে বিন্যস্ত করেছিলেন* যেন শাসন ক্ষমতা কোনক্রমে বাঙালির হস্তগত না হয়। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ তা সঠিকভাবে অনুধাবন করেন। সকল অধিকার আদায়ে দফায় দফায় আন্দোলন সংগ্রামে নামেন বীর বাঙালিরা। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চে অধিকার আদায়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন বীর বাঙালিরা। ৩০ লাখ মানুষের প্রাণের বিনিময়ে এবং ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। এরপর লাল-সবজের পতাকা মুক্তভাবে উড়ে বাংলার আকাশে।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন ১৯৫৮ সালের সামরিক শাসন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা সংকোচ বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা দাবি, আগরতলা ষড়যন্ত মামলা, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধসহ বাঙালির সকল অধিকার আদায় হয়েছে প্রাণের বিনিময়ে। লাখ লাখ শহীদের আমরা স্বাধীন বাঙালিরা বিভিন্ন দিবসে স্মরণ করি শহীদ মিনারে ফুলেল শ্রদ্ধা জানিয়ে। একটি শহিদ মিনার আমাদের চেতনা আমাদের শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণের একমাত্র স্বারক।
যুক্তরাজ্যের পরিপাটি ও উন্নত শহর স্কটল্যান্ডে অ্যাভারডিন শহর। এই শহরে বাঙালি জাতির একটি বড় অংশের বসতি। কিন্তু বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামসহ সকল অধিকার আদায়ের সংগ্রামে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের শ্রদ্ধা নিবেদন করার মতো একটি শহীদ মিনার নেই বাঙালিদের। তাই বাংলাদেশের ১৮ কোটি জনতা এবং বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বসবাসকারী বাঙালি কমিনিউনিটির পক্ষ থেকে অ্যাভারডিন শহরে একটি শহিদ মিনার নির্মাণ করে দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করতে যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের সুযোগ প্রদানের আবেদন করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, আবদুল মতিনের পৈত্রিক বাড়ি সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার সিংচাপুর ইউনিয়নের কামারগাঁওয়ে। তার জন্ম যুক্তরাজ্য হলেও তিনি ভুলে যাননি নাড়ি, মা ও মাটির টান। তাই তিনি এমন মহতি আবেদন জানিয়েছেন।
কোন মন্তব্য নেই। আপনি প্রথম মন্তব্যটি করুন। on স্কটল্যান্ডে শহিদ মিনার স্থাপনের দাবি সিলেটি আব্দুল মতিনের