|
দলান্ধতা বাংলাদেশের সামাজিক একটি জটিল সমস্যায় রূপ নিচ্ছে। দলীয় ভাবনা, দলপ্রীতি এবং দলকানা ও দলান্ধ মনোবৃত্তি এখন কিছু স্বার্থান্বেষীগোষ্ঠীর কারণে তালগোল পাকিয়ে গেছে। শুধু তাই নয় এটি এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যে দলান্ধতার বিপরীতে অবস্থান নিলে কিংবা কারো কোন ভূমিকা কোন নেতা-কর্মীর পক্ষে না গেলে দেশদ্রোহীতা-রাস্ট্রদ্রোহীতার তকমাও এঁটে দেয়া হচ্ছে। এতে এই স্বার্থান্বেষীরা উপলব্ধি করতে পারছে কি না জানি না যে, দেশপ্রেম-রাষ্ট্রপ্রেম নিয়ে এ জাতীয় তকমা-ট্যাগ এঁটে দেয়ার খেলা, স্বার্থান্ধের খেলাটা নাজুক একটি বিষয়। রাষ্ট্র-দেশকে সকল স্বার্থের উর্ধ্বে রাখতে হবে।
বাংলাদেশ এখন ৫০ বছর অতিক্রম করেছে। কঠিন দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ জনগোষ্ঠীই এখন এদেশের মুখ্য নাগরিক। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ বিরোধীরা পরাজিত শক্তি। নৈতিকভাবে এরা যেমন দূর্বল তেমনি অপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়ায় এনে দেশ এখন কলুষমুক্ত। বাংলাদেশ এখন আর অন্য কারো স্বপ্নের রাষ্ট্র নয়; একটি স্বাধীন ও স্বার্বভৌম বাংলাদেশ। ৫০ বছরে বালাদেশ অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয় এসেছে। ১৯৭৫ সালের নির্মম পটপরিরবর্তন বাংলাদেশের রাজনৈতিক-রাষ্ট্রীয় ইতিহাসে নতুন মোড় এলেও সেই সময়টা আমাদের স্বাধীনতা-স্বার্বভৌমত্বের অস্তিত্বের জন্য একটি কঠিন সময় ছিল। আপামর জনতার দেশপ্রেম, লক্ষ প্রাণের রক্তের পবিত্রতা এবং আমাদের সৌভাগ্যে আমরা সে কঠিন সময় অতিক্রম করেই এখন সুবর্ণ জয়ন্তী পার করে সামনের পানে এগিয়ে যাচ্ছি। সুতরাং হালকা ছুঁতোয় কারো উপর দেশদ্রোহীতা-রাষ্ট্রদ্রোহীতার তকমা না সেঁটে দেশের গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো সমৃদ্ধ করতে সকলেই স্ব স্ব অবস্থান থেকে দায়িত্ববান-যত্নবান হই।
প্রাতিষ্ঠানিক গণতন্ত্র কিংবা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো দাঁড়াতে না পারলেও আমরা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছি এবং আমাদের দেশ পরিচালনার উপলক্ষ এই গণতন্ত্রই। এখানে গণতন্ত্র ব্যর্থ হবার দায় নিয়ে কিছু বলছি না। আমি বলতে চাই ভিন্নমত দমনের জন্য রাষ্ট্র-দেশকে খড়গ না বানিয়ে ভিন্নমতকে আত্মসমালোচনা এবং নিজের ভূমিকার আত্মপর্যালোচনায় ব্যবহার করুন। এতে দেশ এবং রাষ্ট্র সমৃদ্ধ হবে।
২.
মুরাদ খান। নাট্যকার। সংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। প্রগতিশীলা ঘরানার একজন মানুষ। বাংলাদেশের প্রাচ্যনাটের দর্শকনন্দিত নাটক ‘কইন্যা ‘। সিলেট-সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলের লৌকিকতা নিয়ে এ নাটক। এটির রচয়িতা মুরাদ খান। মূলধারার নাট্যমঞ্চে এটি একাধিকবার মঞ্চস্থ হয়েছে। যুক্তরাজ্যে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তার সরব পদচারণা রয়েছে। বাঙলা, বাঙালীর বিকাশ ব্রিটিশ মূলধারায় ছড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি ব্রিটিশ বাঙালীর মন-মননে ‘রুটস’ চিহ্নিতকরণে অনন্য ভূমিকা রেখে চলেছেন।
মুরাদ খান একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক। সম্প্রতি তাকে নিয়ে বাংলাদেশ এবং প্রবাসে অতিশয়-অতিরঞ্জিত অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে একটি মহল। মুরাদ খান যে দেশদ্রোহী-রাষ্ট্রদ্রোহী নন তা দীর্ঘদিন যাবত যারা তাকে চিনেন-জানেন তারা নির্দ্বিধায় বলতে পারেন। এখানে এ বিষয় নিয়ে সাফাই গাওয়ার কিছু নেই। তবুও তকো-ট্যাগ লাগানোর প্রবণতায় মুরাদ খানের মত মানুষও আজ আক্রান্ত। যারা সাম্প্রতিক বাংলাদেশের রাজনৈতিক-রাষ্ট্রীয় ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখেন তারা এ জাতীয় তকমা-ট্যাগ লাগানো দেখে উদ্বিগ্ন না হয়ে পারেন না।
মুরাদ খানের অপরাধ কী? তিনি আল জাজিরার একটি প্রতিবেদনের একটি লাইনে কণ্ঠ দিয়েছেন। তিনি পেশাদার একটি এজেন্টের মাধ্যমে নিযুক্ত হয়ে এ কণ্ঠ দেন এবং এ ব্যাপারে তার বক্তব্য সম্প্রতি মিডিয়ায় প্রদান করেছেন। উল্লেখ্য আল জাজিরার এ প্রতিবেনটি ছিল বাংলাদেশের রাস্ট্রীয় পর্যায়ে দূর্ণীতি বিষয়ক। আমার প্রশ্ন এই প্রতিবেদনে কণ্ঠ দেওয়াতে মুরাদ খানকে রাষ্ট্রদ্রোহী-দেশদ্রোহী বলাটা কতটুকু যুক্তিযুক্ত। এখানে আল জাজিরার সেই প্রতিবেদন নিয়ে কিছু বলতে চাই না। এটা সংশ্লিষ্ট মহল দেখবে। যদি প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু নিয়ে আপত্তি থাকে তাহলে যথাযথ প্রক্রিয়ায় এর জবাব দেয়া হবে। এটা ভিন্ন বিষয়। কিন্তু মূল প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু এবং প্রতিবেদন তৈরির প্রক্রিয়ার সাথে পূর্ব থেকে অবহিত না থেকেও মুরাদ খানকে দোষী সাব্যস্ত করা এবং তাকে দেশদ্রোহী বানিয়ে ফেলাটা অন্যায় এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করে, বাঙলা-বাঙালীয়ানাকে বুকে ধারণ করে তার দীর্ঘদিনের দেশের জন্য কাজ-অঙ্গীকারের প্রতি অবজ্ঞাও বটে।
৩.
মুরাদ খান একজন সাহসী, জেদী মানুষ। যা ভাবেন তা নিজের মত করেই করতে চান, করেনও। এতে বৃহত্তর পরিবেশে কাজ করতে গিয়ে সমস্যা তৈরি হয়।
বার্মিংহামে গণজাগরণ মঞ্চ, সাপোর্ট বাংলাদেশ, স্মল হীথ পার্কে অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করে শহীদ দিবস পালন, স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ প্রক্রিয়ায় অন্যদের সাথে মুরাদ খানের সম্পৃক্ততা-উদ্যোগ-ভূমিকা সর্বোপরি পূর্বানাট। এই হচ্ছে যুক্তরাজ্যে মুরাদ খানের কর্মক্ষেত্র-পরিধি।
সবকিছু মিলিয়েই মুরাদ খান অন্যের ঈর্ষা পাবার মত অনেক ভাল কাজ করেছেন-করছেন। এসকল ক্ষেত্রে সফলতার পালক ঈর্ষাকাতরদের মাঝে বদহজম এবং বঞ্চনাবোধ তৈরি করেছে। আর বঞ্চনাবোধ অপরের সাফল্য নিয়ে ঈর্ষান্বিত হতে বাধ্য করে।
ঈর্ষাকাতরদের নোংরা অপপ্রচারের স্বীকার হচেছন মুরাদ খান যেমন তেমনি স্বার্থান্ধরা নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের মোক্ষম হাতিয়ার-মাধ্যম হিসেবেও মুরাদ খানকে ব্যবহার করছে বলে মনে হচ্ছে। মুরাদ খানের দেশপ্রেম-দেশভাবনা এবং চেতনা সম্পর্কে এই স্বার্থান্বেষীরা পুরোপুরি অবহিত। এরপরেও তারা ট্যাগ লাগাচ্ছে। এহেন ট্যাগ লাগানোর ধরণ প্রকৃত দেশদ্রোহীতা-রাষ্ট্রদ্রোহীতার মোকাবেলায় দেশভাবনা এবং রাষ্ট্রভাবনাকে হালকা করবে। মুরাদ খানের ভুল আছে হয়তো তাই বলে তাকে দেশদ্রোহী-রাষ্ট্রদ্রোহী কেন বানাতে হবে।
লেখক: সম্পাদক, বাংলা ভয়েস
কোন মন্তব্য নেই। আপনি প্রথম মন্তব্যটি করুন। on কইন্যা পীরের আশীর্বাদপুষ্ট মুরাদ খান এবং ঈর্ষাকাতরদের বদহজম