ব্রাসেলস, ৩ অক্টোবরঃ
বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলস এ বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় বাংলাদেশ ফোরাম (ইবিএফ) এর উদ্যোগে “সংঘাতময় চরমপন্থার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ায় নিরাপত্তা হুমকি এবং সরকার ও সুশীল সমাজের করণীয়” শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সম্মেলনে বক্তাগণ বলেন, ধর্মীয় এবং মৌলবাদী চরমপন্থা থেকে শুরু করে সকল ধরণের জাতিগত দ্বন্দ্ব ও সংঘাত আজ বিশ্বায়নের যুগে শুধুমাত্র দক্ষিণ এশিয়া কিংবা একটি অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ইউরোপ এবং আমেরিকা সহ সকল অঞ্চলের মানুষই হুমকির সম্মুখীন। তাই সংঘাত ও চরমপন্থা প্রতিরোধে আমাদেরকে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
ইউরোপীয় ব্রাসেলস প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইবিএফ সহ-সভাপতি বিকাশ চৌধুরী বড়ুয়া। ইবিএফ সভাপতি আনসার আহমেদ উল্লাহ’র সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অধিবেশনে “সংঘাতপূর্ণ চরমপন্থা এবং অস্থিতিশীলতার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার জন্য হুমকি এবং করণীয়” বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট উন্নয়ন কর্মী এবং মানবাধিকার কর্মী আসিফ মুনির। প্রথম অধিবেশনে “দক্ষিণ এশিয়ায় সংঘাত এর রাজনৈতিক অর্থনীতি” বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া ইন্সটিটিউট এর সহযোগী সদস্য ডঃ ভোলফগাঙ পেটার সিঙ্গেল। ব্রাসেলস ভিত্তিক উইলফ্রিড মারটেন্স সেন্টার ফর ইউরোপিয়ান স্টাডিজ এর অতিথি গবেষক ডঃ থমাসো ভিরগিল। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন জার্মান আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ডয়েচে ভেলে’র এশিয়া বিভাগের প্রধান দেবারতি গুহ।
সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন ইবিএফ উপদেষ্টা ডঃ আহমেদ জিয়াউদ্দীন। “বাংলাদেশে মৌলবাদঃ পর্দা উন্মোচন” বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশের বন্ধু খেতাবপ্রাপ্ত ব্রিটিশ সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক ক্রিস ব্ল্যাকবার্ন। বক্তব্য রাখেন নেদারল্যান্ডস এর সংসদ সদস্য নিলস ফান ডেন ব্যার্গ, ইটালি থেকে নির্বাচিত ইউরোপীয় সংসদ সদস্য ব্রান্দো বেনিফি, বেলজিয়ামস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সেক্রেটারি ফখরুদ্দীন আহমেদ, গ্লোবাল সলিডারিটি ফর পিস এর বেলজিয়াম কোঅর্ডিনেটর এম এম মোর্শেদ, ডঃ ফারুক মির্জা, আহমাদিয়া সম্প্রদায়ের নেদারল্যান্ডস এর নেতা কাওসার আহমেদ, নির্মূল কমিটি সুইজারল্যান্ডের সভাপতি রহমান খলীলুর, যুক্তরাজ্য ভিত্তিক লেখক প্রিয়জিত দেবসরকার, বেলজিয়াম এর কমিউনিটি নেতা বজলুর রশীদ বুলু, জার্মানির কমিউনিটি নেতা রোকেয়া সুলতানা রোথে এবং কামাল ভুঁইয়া।
বক্তাগণ ইউরোপ ও এশিয়া সহ বিশ্বের সকল অঞ্চলে চরমপন্থা প্রতিরোধে সমাজের প্রত্যকটি স্তরে বিশেষ করে তরুণ ও যুব সম্প্রদায়ের মাঝে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সমাজের সাথে একাত্মতা এবং সম্মানজনক অবস্থানে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় কর্মসূচী এবং পদক্ষেপ গ্রহণের উপর গুরুত্বারোপ করেন।
ইউরোপীয় সাংসদ বেনিফি বলেন, ইটালি সহ ইউরোপের দেশগুলোতে তরুণ সমাজের সদস্যরা বিশেষ করে অভিবাসী জনগোষ্ঠীর দ্বিতীয় এবং তৃতীয় প্রজন্মের তরুণরা সমাজের সাথে সঠিকভাবে একীভূত হতে না পারায় এবং চরমপন্থী গোষ্ঠীর লোভনীয় নানা প্রচারণায় সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ছে। তাই এখন সকল ধরণের চরমপন্থা প্রতিরোধে তরুণ সমাজের সদস্যদের পাশে দাঁড়াতে হবে। এছাড়া বক্তাগণ চরমপন্থী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সাথে কেবল কোন একটি বিশেষ ধর্মকে জড়িয়ে সমাজে ধর্মীয় বিভেদ ও বিদ্বেষ ছড়ানো থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। বরং বিভিন্ন মত, ধর্ম, জাতি এবং বর্ণের গোষ্ঠীর মধ্যে সংলাপের মধ্য দিয়ে চরমপন্থী প্রবণতা প্রতিরোধের উপর গুরুত্ব দেন বক্তারা।
ডাচ পার্লামেন্ট সদস্য নিলস ফান দেন বার্গ তার বক্তব্যে বলেন, সমাজ এবং শান্তির জন্যে যারা হুমকি তাদের একঘরে করে রাখলে সমস্যার সমাধান হবেনা। তাদের সাথে আলোচনার মধ্যে দিয়ে, ডায়লগের মধ্যে দিয়ে তাদের সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে হবে। শান্তির জন্যে ডায়লগের বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করে এই তরুণ ডাচ এম পি।
সম্মেলনে বাংলাদেশ ছাড়াও বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড, ইতালি, জার্মানি, এবং যুক্তরাজ্য সহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ৭০ উন্নয়ন কর্মী, মানবাধিকার কর্মী, গবেষক, ইউরোপীয় রাজনীতিবিদ, ইউরোপের বিভিন্ন মানবধিকার সংস্থার প্রতিনিধি, পেশাজীবী, মিডিয়া কর্মী, সাংবাদিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিক প্রতিনিধি অংশ গ্রহণ করেন।
-প্রেস বিজ্ঞপ্তি
কোন মন্তব্য নেই। আপনি প্রথম মন্তব্যটি করুন। on বিশ্বায়নের যুগে চরমপন্থার হুমকি থেকে কেউ নিরাপদ নয়