সিলেট ও মৌলভীবাজার সীমান্তে সর্তক বিজিবি
ভারতের আসামে নাগরিকপঞ্জি বা এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। গতকাল শনিবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টার পর এ তালিকা প্রকাশ করা হয়। চূড়ান্ত তালিকায় ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৫৭ জনের নাম বাদ পড়েছেন। তবে তারা আপিল করতে পারবেন।
তালিকায় নাম আছে কিনা জানা যাবে এনআরসি সেবাকেন্দ্রে গিয়ে। জেলা প্রশাসকের দপ্তরেও দেখা যাবে এনআরসি তালিকা। এনআরসির ওয়েবসাইটে গিয়ে এআরএন নম্বর টাইপ করেও দেখা যাবে নাম আছে কিনা। আবেদনকারীদের জন্য বিশেষ টোল ফ্রি নম্বরেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে (আসামের জন্য-১৫০১৭, আসামের বাইরের জন্য ১৮০০৩৪৫৩৭৬২) ।
তালিকায় নাম না থাকলেও অবশ্য এখনই
ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হবে না। এক হাজার ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল খোলা হয়েছে। যেখানে গিয়ে ১২০ দিনের মধ্যে নিজেদের নাগরিকত্ব প্রমাণে তথ্য পেশ করতে পারবেন।
এদিকে যে কোন পরিস্থিতি মোকাবিলায় আসামের ৩৩ জেলার ১৪টিকে স্পর্শকাতর ঘোষণা করেছে। মোতায়েন করা হয়েছে ১৪৫ কোম্পানি আধাসেনা।
আসামে প্রথম নাগরিকপঞ্জি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৫১ সালে। ২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে শুরু হয় প্রক্রিয়া। এতে ৫২ হাজার কর্মীকে কাজে লাগানো হয়। বাজেট বরাদ্দ
হয় ১ হাজার ২২০ কোটি রুপি। তার পর থেকে সংশোধন হতে হতে শেষ পর্যন্ত ভারতের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হলো। খসড়া তালিকা প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই। সেই তালিকায় তিন কোটি ৩০ লাখ মানুষের মধ্যে বাদ পড়েছিলেন ৪০ লাখ ৭ হাজার ৭০৭ জন। পরে অতিরিক্ত খসড়ায় বাদ পড়ে
ন আরো ১ লাখ মানুষ। বাদ পড়াদের মধ্যে অধিকাংশই বাঙালি। পরে তালিকায় নাম সংযোজনের আবেদন করেন ৩১ লাখ।
সিলেট ও মৌলভীবাজার সীমান্তে সর্তক বিজিবি
ভারতের আসামে নাগরিকত্বের চূড়ান্ত তালিকা (এনআরসি) প্রকাশ হওয়ার পর রাজ্যটিতে অস্থিরতা বিরাজ করায় সিলেট ও মৌলভীবাজার সীমান্তে যেকোনো ধরণের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। নিয়মিত টহল জোরদার করা ছাড়াও স্থানীয়দেরকে যেকোনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতি লক্ষ্য করা মাত্র বিজিবিকে অবহিত করার আহবান জানানো হয়েছে।
ভারতের আসাম রাজ্যের সঙ্গে সরাসরি সীমান্ত রয়েছে সিলেট জেলার জকিগঞ্জ, কানাইঘাট ও বিয়ানীবাজার উপজেলার এবং মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা, কুলাউড়া ও কমলগঞ্জ উপজেলার।
বিজিবির বিয়ানীবাজার ব্যাটালিয়নের (৫২ বিজিবি) কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফয়জুর রহমান, এসপিপি, পিএসসি বলেন, “২০১৮ সালে এনআরসির খসড়া তালিকা প্রকাশের পর থেকেই বিজিবি হেড কোয়ার্টার্সের নির্দেশে সতর্কাবস্থায় রয়েছে বিজিবি। গতকাল পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশের পর মৌখিকভাবে আবারও সতর্কতা জারি করা হয়। সে অনুযায়ী সীমান্তে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে বিজিবি।”
তিনি বলেন, “এখন পর্যন্ত কোনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি, তবে আসাম থেকে মানুষ সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে ঢুকতে চাইলে বা ভারত অনুপ্রবেশ করানোর চেষ্টা করলে তা প্রতিহত করার জন্য বিজিবি সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করেছে। সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী স্থানীয়দের সতর্ক করা হয়েছে যাতে সীমান্তের যেকোনো অংশ দিয়ে কোনো অনুপ্রবেশের চেষ্টা করা হলে তা সঙ্গে সঙ্গে বিজিবিকে জানানো হয়।” অতিসম্প্রতি ঘটে যাওয়া বড়লেখা সীমান্তে গুলিবর্ষনের ঘটনার মাধ্যমে ভীত সাধারণ জনগনকে সীমান্ত হতে দূরে রেখে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করানো হতে পারে কি না সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
বিজিবি ১৯ ব্যাটালিয়নের পরিচালক লে. কর্নেল সাঈদ হোসেন বলেন, ‘আসামের বিষয় মাথায় রেখেই বিজিবিকে সর্বোচ্চ সর্তক থাকার জন্য ইতোমধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘সীমান্তে নরমালি যাতে কোন ধরণের অবৈধ অনুপ্রবেশ না ঘটে সেজন্য সীমান্ত এলাকায় বাড়তি নজরদারি করা হয়েছে। তবে ফোর্সের সংখ্যা আগের মতোই রয়েছে। তিনি জানান, সীমান্তে ওই ধরনের অনুপ্রবেশ কিংবা অপ্রীতিকর পরিস্থিতি নেই। সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে বলেও জানান তিনি। সিলেট জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বলেন, সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের কোন তথ্য না থাকলেও তারা সীমান্ত এলাকায় নজরদারী বাড়িয়েছেন। সীমান্ত এলাকায় স্বাভাবিক পরিবেশ বিরাজ করছে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, আসামের সাথে সিলেটের দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। আর এনআরসিতে বাদ পড়াদের প্রায় ১৭ লাখই বাঙালী। এ কারণে পুশইনের আশঙ্কাও রয়েছে। তবে বাংলাদেশ মনে করছে আসামে বিজেপি সরকারের তৈরি করা জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) থেকে যে ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৫৭ জন বাদ পড়েছেন, তারা বাংলাদেশি নয়। তালিকাটি প্রকাশের পর এ বিষয়ে শনিবার ভারতের একটি সংবাদমাধ্যম বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি এ মনোভাব প্রকাশ করেন।
কোন মন্তব্য নেই। আপনি প্রথম মন্তব্যটি করুন। on আসামে চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা প্রকাশ, বাদ ১৯ লাখ