বার্মিংহামে বিলেতী জাহাজীদের সুখ-দুঃখের কাহিনী নিয়ে রচিত সল্টি ওয়াটার এন্ড আস নাটক মঞ্চস্থ
বিলেতের মূলধারা থিয়েটারে ‘সল্টি ওয়াটার এন্ড আস’ মঞ্চায়নের মাধ্যমে পূর্বানাট এর আত্মপ্রকাশ ঘটল। গত ২৩ মার্চ বার্মিংহামের দি ড্রাম-এ প্রায় দুই ঘন্টার এ নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। প্রায় দুই শতাধিক দর্শক পিনপতন নিরবতার মধ্য দিয়ে মুরাদ খান রচিত ‘সল্টি ওয়াটার এন্ড আস’ নাটকটি দর্শকরা উপভোগ করেন। এটি তাদের প্রথম প্রযোজনা। নির্দেশনা দিয়েছেন ফিলিজ ওজকান।
পূর্বানাট সিঅইসি বিলাতের একটি পেশাদার থিয়েটার কোম্পানী। তাদের প্রযোজনাটি আর্টস কাউন্সিল, ইংল্যান্ড এর সহযোগীতায় নির্মিত হয়েছে। পূর্বানাট, প্রাচ্যের গল্প, প্রাচ্যের রীতিতে পরিবেশনার মাধ্যমে পেশাদারিত্ব মান বজায় রেখে বিলাতের থিয়েটারের মুলধারাকে এক নুতন আঙ্গিকে সমৃদ্ধ করতে চায়।
পেশাদার এই থিয়েটার পূর্বানাট নুতন হলেও মুরাদ খান একজন প্রতিষ্ঠিত নাট্যকার। বাংলাদেশের অন্যতম নাটকের দল প্রাচ্যনাট তাদের নিয়মিত প্রযোজনা হিসাবে মুরাদ খান রচিত কইন্যা নাটকের মঞ্চায়ন করে যাচ্ছে। উল্লেখ্য মুরাদ খান প্রাচ্যনাটের একজন প্রতিষ্ঠাকলীন সদস্য।
‘সল্টি ওয়াটার এন্ড আস’এর পরিচালক ফিলিজ ওজকান বিলেতের একজন ব্যস্ত নির্দেশক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। বিলেতে তার নিদের্শিত নাটক ব্যাপক সমাদৃত। এই নির্দেশক কয়েকমাস আগে তার নির্দেশিত নাটক বীরাঙ্গনা নিয়ে বিলেতের বিভিন্ন শহর এবং বাংলদেশ সফর করে এসেছেন।
পূর্বানাটের এই নাটক ‘সল্টি ওয়াটার এন্ড আস‘, ভারতবর্ষের লস্কর হিসাবে যারা জাহাজে কাজ করেছেন এবং পরবর্তীতে বিলেতে বসতি গড়েছেন তাদের জীবনের সুখ-দুঃখ আর সংগ্রামের কাহিনী নিয়ে গড়া। নাট্যকার মুরাদ খান পাশাপাশি ১৮০২/৩ সালে সিলেটের ঈদগাহ ময়দানে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে নিহত হাদামিয়া মাদামিয়ার বংশধরদের প্রতিশোধ গ্রহনে বিলেতে যাত্রার কাহিনী‘ সন্নিবেশিত করেছেন। তৎকালীন ট্যাক্স কালেক্টর রবার্ট লিন্ডসের নৃশংসতার প্রতিশোধ নিতে সইদুল্লার জাহাজে করে বিলাত যাত্রার সাথে অন্যান্য জাহাজীদের সংগ্রাম এবং বিলেতে বসতি গড়ার যাত্রাকে তুলে ধরেছেন পাশাপাশি সৈয়দ মুজতবা আলীর বিখ্যাত ছোট গল্প নোনা জল-এ বর্ণিত জাহাজী শমরুদ্দীর নুতন বাড়ী বানানোর স্বপ্ন এবং সেই স্বপ্ন চুরি হওয়ার স্বপ্নকে আর অন্যান্য জাহাজীদের স্বপ্নের কথামালা দিয়ে নাট্যকার তার চিত্রনাট্য সাজিয়েছেন।
মানুষের এই চিরায়িত স্বপ্ন বাড়ী বা হোম কে নাটকে ভিন্ন মাত্রায় তুলে ধরেছেন যখন সইদুল্লার নাতনী এই সময়ে নিজেকে প্রশ্ন করে তার বাড়ী বা হোম কোন যায়গায়। বিলেতের বর্ণবাদী প্রচারণা ‘গো ব্যাক হোমকে’ নাটকে শৈল্পিকভাবে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। নাটকে দেখানো হয়েছে, সেই সময়ের জাহাজীদের আত্মত্যাগ, সংগ্রাম আর রাজকীয় বাহিনীর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জীবন দেয়া বীর বাংগালীদের অবদান। আসলে এটা বিলাতের হেরিটেজের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই অংশীদারীত্বের হেরিটেজ এর জয়গান গাওয়া হয়েছে হোম বা বাড়ীকে এক ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে।
বিভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ডের পেশাদার অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নিয়ে মঞ্চস্থ ‘সল্টি ওয়াটার এন্ড আস‘ মাল্টিকালচারাল বিলেতের থিয়েটারে এক নুতন মাত্রা নিয়ে এসেছে বলে নাটক দেখে অনেকেই মন্তব্য করেছেন। বিশেষ করে প্রবাসে কয়েক জনম কাটিয়ে দিলেও শেকড়ের টান, শেকড়ের উপলব্ধি মানুষমাত্রই অনুভব করে। তাই সল্টি ওয়াটার এন্ড আস নাটককে চিরাচরিত অভ্যস্থ মন-মানসে আপাতদৃষ্টিতে একটি ‘বোরিং-টাইপ’ মনে হলেও দর্শকদের অনেকেই যে মঞ্চস্থ নাটকের চরিত্র শমরুদ্দীন, সইদুল্লার মাঝে নিজেদের পূর্বপুরুষদের খুঁজে ফিরেছেন বলে প্রতিক্রিয়ায় জানান।
এই নাটকটি গত ২৯ মার্চ ২০১৫, রবিবার সন্ধ্যা ৭টার সময় লন্ডনের ব্রাডি আর্ট সেন্টারে প্রদর্শিত হয়। এছাড়াও আগামী ১৪ এপ্রিল, মঙ্গলবার ওল্ডহামের গ্রান্ড থিয়েটার হলেও মঞ্চস্থ হবার কথা রয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই। আপনি প্রথম মন্তব্যটি করুন। on বার্মিংহামে বিলেতী জাহাজীদের সুখ-দুঃখের কাহিনী নিয়ে রচিত সল্টি ওয়াটার এন্ড আস নাটক মঞ্চস্থ