গত ১৪ই জুন রোজ রোববার বিকাল ৬টা হতে মাগরিব পর্যন্ত দারুল উলুম কনফারেন্স হলে দারুল উলুম আল-ইসলামিয়া বার্মিংহামের খতমে বুখারী ও হিফজুল কোরআন সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
দুই সেশনের এই অনুষ্ঠানের প্রথম সেশনে দারুল উলুম ছাত্রদের ছিল। এতে কালামুল্লাহ থেকে তিলাওয়াত করেন দারুল উলুমের ছাত্র কামড়ান মাজেদ। ইসলামী সঙ্গীত পরিবেশন করেন মুজাম্মেল হক ও তালহা ইদ্রিস। এবং আরবিতে বক্তৃতা পেশ করেন মোখতার আহমদ ও বুখারী ক্লাসের ছাত্র মাওলানা সলীম মোল্লা। এরপর বিগত সেশনে বিভিন্ন ক্লাসের যারা ভাল করেছে তাদের সার্টিফিকেট দেয়া হয়।
আসরের পর শুরু হয় অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় ও প্রধান সেশন। পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হওয়া এই সেশনে দারুল উলুমের ব্যাপারে আলোচনা করেন মাওলানা কিয়ামুদ্দিন। একক ভাবে ইসলামী সঙ্গীত পরিবেশন করেন মোজাম্মেল হক। বিশেষ অথিতি হিসাবে আলোচনা করেন দারুল উলুমের প্রাপ্তন ছাত্র মাওলানা আব্দুল জব্বার।
অনুষ্ঠানের প্রধান অথিতি হযরত মাওলানা আনিস আহমদ আজাদ কাসিমী বিলগ্রামী সাহেব হাদীছ সমাপনকারীদের নিয়ে খতমে বুখারীর কার্যক্রম শুরু করেন। সমাপনী ছাত্ররা প্রধান অতিথির সামনে আখেরী হাদীছ পড়ে বোখারী শরীফ অধ্যয়ন সম্পন্ন করেন।
এরপর প্রধান অথিতি উক্ত হাদিছের বিশদ ব্যাখ্যা করেন। তিনি হাদীছ অধ্যয়নের গুরুত্ব ও মহত্ব এবং হাদীছের জগতে বোখারী শরীফের অবস্থান তুলে ধরেন। বোখারী শরীফের সর্বশেষ হাদীছ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেনঃ বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে আল্লাহ ও রাসূলের (সাঃ) বানীর সত্যতা দিন দিন প্রমাণিত হচ্ছে। আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন বান্দার আমল ওজন করবেন। মানুষের সকল কাজ কর্মের রেকর্ড রাখা হচ্ছে। এক সময় এসব বিষয় মানুষের বুঝে আস্ত না। কিন্তু আজকাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে এসব বিষয় সহজেই মানুষের বোধগম্য হচ্ছে। তিনি সঠিক আকীদায় বিশ্বাসী হতে এবং ভ্রান্ত আকীদাহ থেকে বেঁচে থাকতে সবাইকে আহ্বান জানান। দীর্ঘ আলোচনার পর তিনি হাদীছ ও হিফজ সমাপনী ছাত্রদের পাগড়ী প্রধান করেন।
এ বৎসর যারা হাফিজ হয়েছেন তারা হলেন: হাফিজ মুহাম্মদ মুহাম্মদ, হাফিজ আনাস তাইয়্যেব, হাফিজ মোখতার আহমদ, হাফিজ ইউনুস উমর, হাফিজ আব্দুল কাদির, মাও হাফিজ আব্দুর রাজ্জাক আলী এবং হাফিজ লোকমান আহমদ।
আর এ বৎসর হাদীছের দাওরা সমাপ্ত করে যারা মাওলানা হয়েছেন তারা হলেন: মাওলানা সলীম মোল্লা ও মাওলানা সাইফুর রহমান।
বরকতময় ও বিরাট এ অনুষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন দারুল উলুম আল-ইসলামিয়ার প্রিন্সিপ্যাল শাইখুল হাদীছ আল্লামা মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুর রহীম সাহেব।
উক্ত অনুষ্ঠানে বহু আলেমে দ্বীন, দারুল উলুমের ছাত্র শিক্ষক, জামে মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টারের স্টাফ, ট্রাস্টিজ, দারুল উলুমের মজলিসে শুরার মেম্বার ও সর্বস্তরের জনগণ উপস্থিত ছিলেন। এতে মহিলাদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা ছিল।
প্রধান মেহমান কর্তৃক মোনাজাতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়। এবং আসরের নামাযের পর খাবার পরিবেশন করা হয়। গুরুত্বপূর্ন ও বরকত ময় এই অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন দারুল উলুমের মোহাদ্দেস ও জামে মসজিদ এবং ইসলামিক সেন্টারের ম্যানেজার মাওলানা আব্দুল মতিন আল-আজহারী।
দারুল উলুম ছাত্রদের সামার উপভোগ
শীত বৃষ্টি আর তুষার প্রভাবিত এই দেশের জনগণ সব সময় বসন্ত ও গ্রীষ্ম মৌসুমের অপেক্ষায় থাকে। বসরের অধিকাংশ সময় মোটা কাপড় পরা, ঘর ও গাড়ির ভিতর আবদ্ধ জীবন থেকে বের হয়ে একটু খোলা আকাশের নীচে চেয়ার টেবিল পেতে বসে হাল্কা কাপড় পরে গ্রীষ্মের মিষ্টি রোদ ও মৃদু বাতাস উপভোগ করতে চায়। তাই দেখা যায় গ্রীষ্মের শুরুতেই রাস্তা ঘাটে, পার্কে, স্কুলের মাঠে সবার বিচরণ বেড়ে যায়।
এর ব্যতিক্রম নয় দারুল উলুমের ছাত্ররাও। চার দেয়ালের ভিতর ক্লাস করার একগোয়েমী কাটাতে মাদ্রাসার বিশাল প্লে গ্রাউন্ডে ক্লাস করে সামার উপভোগ করেছে দারুল উলুমের ছাত্ররা।
উল্লেখ্য বার্মিংহামের স্মলহীথের উপকণ্ঠে সুপ্রশস্থ ও মনোরম পরিবেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দারুল উলুম ইসলামিক হাই স্কুল ও কলেজ। ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত এই দারুল উলুমে অনেক হাফিজে কোরআন ও আলেমে দ্বীন তিরী হয়েছে। যারা দেশে বিদেশে দক্ষতা ও সুনামের সাথে বিভিন্ন গুরুপূর্ন দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
কোন মন্তব্য নেই। আপনি প্রথম মন্তব্যটি করুন। on দারুল উলুম বার্মিংহামের খতমে বুখারী সম্পন্ন