মুসলিমবিদ্বেষী মন্তব্যে বিশ্বব্যাপী নিন্দা, ২৪ ঘন্টারও কম সময়ে লক্ষাধিক স্বাক্ষর
ট্রাম্পের বক্তব্য ভুল ও বিভেদ সৃষ্টি করবে: ক্যামেরন
এ বক্তব্য গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও মানবতা বিরোধী: করবিন
প্রেসিডেন্ট হবার যোগ্যতা হারিয়েছেন ট্রাম্প: হোয়াইট হাউস
লন্ডন, ১০ ডিসেম্বর – মুসলিম বিদ্বেষী বক্তব্যে করে বিশ্বব্যাপী তুমুল সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি মুসলমানদের পাশাপাশি বৃটেনের নিরাপত্তা ব্যবস্হা নিয়েও বিরূপ মন্তব্য করেছেন। তাই তার বৃটেনে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞার দাবীতে মাত্র ২৪ ঘন্টারও কম সময়ের মধ্যে ১ লক্ষ স্বাক্ষর সংগ্রহের কোটা অতিক্রম করেছে। যার ফলে বিষয়টি এখন পার্লামেন্টে আলোচনার জন্য বাধ্যবাদক হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি ক্যালিফোর্নিয়ায় এক সন্ত্রাসী হামলায় ১৪ জন নিহত হওয়ার পর ডোনান্ড এই দাবি জানান। তবে তার এ বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছে হোয়াইট হাউজ এবং রিপাবলিকান নেতারা।
ট্রাম্পকে ব্রিটেনে
ডোনান্ড ট্রাম্পের এমন মন্তব্যে বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠেছে। সারা বিশ্বের মুসলমানদের পাশাপাশি নিন্দায় সামিল হয়েছে হোয়াইট হাউস, পেন্টাগন, ব্রিটিশ ও ফরাসী নেতা এবং জাতিসংঘ উদ্বাস্তু বিষয়ক সংস্হা। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির অঙ্গন হয়ে উঠেছে সমালোচনার ঢেউয়ে উত্তাল। ফেসবুক, টুইটারে চলছে তুমুল আলোড়ন। কেউ কেউ এমনও বলেছেন যে, ট্রাম্পের মুখে হিটলারের প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে। বিপুল সমালোচনার মুখে ট্রাম্প রিপাবলিকান দল ছেড়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করতে পারেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। আর হোয়াইট হাউজের প্রতিক্রিয়ায় জানানো হয়েছে যে, ট্রাম্প এই বক্তব্যের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট হবার যোগ্যতা হারিয়েছেন।
এদিকে, ডোনা? ট্রাম্প তার বক্তৃতায় আরও মন্তব্য করেন যে, লন্ডনের একটি অংশে চরমপন্হার এতটাই বিস্তার ঘটেছে যে, শহরটির পুলিশ বাহিনী এখন নিজেদের জীবন নিয়ে শঙ্কিত।
প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ডোনা? ট্রাম্পের এমন মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ট্রাম্পের মন্তব্য বিভেদ সৃষ্টিকারী এবং তা একেবারেই ভুল।
বিরোধী দলীয় নেতা, লেবার লিডার জেরেমি করবিন ট্রাম্পের নিন্দা জানিয়ে বলেন, তার মন্তব্য গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর হামলা এবং সাধারণভাবে মানবতার বিরুদ্ধে। করবিন জাতিগত বিদ্বেষের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহবান জানান।
যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিষযক মন্ত্রী জেহ জনসন বলেছেন, ট্রাম্পের মন্তব্য কেবল যে আক্রমণাত্মক তাই নয়, এটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তাকেও ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এনবিসি টেলিভিশনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে জনসন ট্রাম্পের মন্তব্যকে ‘দায়িত্বহীন’ বলে এর নিন্দা জানান এবং তা প্রত্যাখ্যান করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্টের খবরে বলা হয়, বিশ্বের নাগরিকবৃন্দ, রাজনীতিক এবং উদ্বাস্তু বিষয়ক কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থীতার দৌড়ে এগিয়ে থাকা ট্রম্পের মন্তব্যকে ঘৃণা সৃষ্টিকারী মন্তব্য বলে অভিহিত করেন এবং এটি সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহে দেশটিতে বিরাজমান ইসলামভীতিজনিত পরিস্হিতিকে আরও নাজুক করে তোলার ইঙ্গিতবহ বলে মন্তব্য করেন।
মিসরের সরকারী ধর্মীয় সংস্হা ‘দার আল-ইফতা ট্রাম্পের মন্তব্যকে ‘ঘৃণাপ্রসূত বক্তৃতাবাজী’ বলে মন্তব্য করেছে। জাতিসংঘ উদ্বাস্তু বিষয়ক সংস্হার একজন মহিলা মুখপাত্র ট্রাম্পের মন্তব্যে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ওই মন্তব্য উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের চলমান প্রক্রিয়াকে ভন্ডুল করতে পারে।
ট্রাম্প গত ৭ ডিসেম্বর, সোমবার এক বিবৃতিতে মুসলমানদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়ার আহবান জানান। ওইদিনই তিনি দক্ষিণ ক্যারোলাইনাই এক সমাবেশে একই আহবান জানান। সেখানে সমবেত জনতা তার নামে ধ্বনি দিয়ে তার মন্তব্যকে স্বাগত জানায়। মঙ্গলবার এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারেও একই মন্তব্যের পুনরাবৃত্তি করেন ট্রাম্প।
ট্রাম্পের ওই মন্তব্যের পর হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মুসলিমদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্যের মাধ্যমে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হবার যোগ্যতা হারিয়েছেন। হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, রিপাবলিকান দলের অন্য সব প্রার্থীর এখনই বলা উচিৎ যে তারা ট্রাম্পকে সমর্থন করেন না।
চলমান রাজনীতি প্রসঙ্গে মন্তব্য করা থেকে সচরাচর বিরত থাকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগন। কিন্তু ঞ্জট্রাম্পের মন্তব্যে বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে পেন্টাগনও। পেন্টাগনের মুখপাত্র বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইসলামের বিরুদ্ধে ক্রুসেড চালিয়ে যাচ্ছে মর্মে আইএস যে প্রচারণা চালাচ্ছে ট্রাম্পের মন্তব্য আইএসের সেই প্রচারণাকেই সমর্থন যোগাবে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে ট্রাম্পের মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে গণমিছিল বের করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর ফ্লোরিডার সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরের মেয়র রিক ক্রিসম্যান তার শহরে ডোনা? ট্রাম্পের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছেন। এই নিষেধাজ্ঞার কথাটি টুইটারে জানিয়ে হঠাৎ করেই বিপুলভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন রিক ক্রিসম্যান।
অন্যদিকে বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় ওঠায় ট্রাম্প এখন রিপাবলিকান দল ত্যাগের ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে জানিয়েছে দ্য টেলিগ্রাফ। পত্রিকাটি বলেছে, এক টুইট বার্তায় ট্রাম্প বলেছেন, নতুন এক জরিপে দেখা গেছে, আমি যদি রিপাবলিকান দল ছেড়ে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করি তাহলে ৬৮ শতাংশ সমর্থক আমাকে ভোট দেবেন।
উল্লেখ্য, রিপাবলিকান দলের অন্য একজন মনোনয়ন প্রত্যাশী বেন কারসন ট্রাম্পের প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বলেছেন, এটা করা ঠিক হবে না।
কোন মন্তব্য নেই। আপনি প্রথম মন্তব্যটি করুন। on ট্রাম্পকে ব্রিটেনে নিষিদ্ধের দাবী